Thursday, March 4, 2010

بسم الله الرحمن الرحيم

{قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ}

অনুবাদঃ আপনি বলুন, আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁরই দয়া , এবং সেটারই উপর তাদের আনন্দ প্রকাশ করা উচিৎ । তা তাদের সমস্ত ধন-দৌলত অপেক্ষা শ্রেয় । (সুরা য়ূনুস আয়াতঃ ৫৮)

অন্ধকারে নিমজ্জিত , ভ্রান্ত মতবাদে লিপ্ত ,গোত্রীয় যুদ্ধে মত্ত , অশান্তির দাবানলে দগ্ধ , মূর্তি পুজায় ব্যস্ত মানুষদেরকে আলোর পথে আহ্বান করতে মহান আল্লাহ তায়ালা মানবতার মুক্তির দূত ,কল্যাণের আঁধার , সাম্য ও ন্যায়ের প্রতীক , হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মরু প্রান্তরে , মক্কা নগরীতে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ৫৭০ খ্রিঃ প্রেরণ করেন ।

যিনি সত্যের ও শান্তির বাণী নিয়ে আগমন করেছিলেন। তাইতো তিনি সমগ্র বিশ্বের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সৃষ্টি জীবের প্রতি এক মহান অনুগ্রহ । পবিত্র কোরানে ইরশাদ হচ্ছেঃ "আমি আপনাকে সমস্ত বিশ্বের জন্য রাহমাত (অনুগ্রহ ) স্বরূপ প্রেরণ করেছি।" [1] তাঁর উপর অবতীর্ণ করা হয় বিজ্ঞানময় এক সংবিধান, যার নাম "আল-কোরান" ।মহান আল্লাহর বাণীঃ "কুরান যা আমি আপনার উপর অবতীর্ণ করেছি মানুষদেরকে অন্ধকারের গহবর থেকে আলোয় নিয়ে আসতে" [2]।তাই মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রেরিত দূত এবং তাঁর উপর অবতীর্ণ এই সংবিধানের মাধ্যমে মানুষদেরকে ইসলামের সুমহান রাস্তা দেখিয়েছেন ।আর এটাই মহান আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত ধর্ম বা রাস্তা ।
তাইতো ইসলাম মানব মন্ডলীর জন্য এক অপূর্ব অনুগ্রহ । এইজন্য শিরোনামে উল্লেখিত আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে খুশি উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন ।

অধিকাংশ তাফসীর কারকগণ উক্ত আয়াতে দয়া ও অনুগ্রহ বলতে রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)[3],পবিত্র কোরান[4], ও ইসলাম কে বুঝিয়েছেন। কেননা, উল্লেখিত নিয়ামত গুলো অন্যান্য নিয়ামত কিংবা অনুগ্রহের তুলনায় দামী কিংবা সমস্ত (নিয়ামতের) বা অনুগ্রহের আঁধার । তবে আলোচ্য আয়াতে দয়া ও অনুগ্রহ বলতে সমস্ত অনুগ্রহের কথা বুঝানো হয়েছে। যেহেতু উক্ত আয়াতটি সাধারণ কিংবা ব্যাপক অর্থের জন্য ।
মহান আল্লাহ প্রদপ্ত সমস্ত নিয়ামতের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হচ্ছে তাঁর প্রেরিত রাসূলগণ। যেহেতু তাঁদের উপর কিতাব অর্পিত হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ "নিশ্চয় আল্লাহর মহান অনূগ্রহ হয়েছে মুসলমানদের উপর যে, তাদের মাঝে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরন করেছেন , যিনি তাদের উপর তাঁর আয়াত সমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন ।আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত (বিজ্ঞান ) শিক্ষা দান করেন । তারা নিশ্চয় এর পূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিলো" [5]। আর সমস্ত রাসূলদের সরদার হচ্ছেন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। পবিত্র হাদীছ শরীফে এসেছে- “ আমি সমস্ত আদম সন্তানদের সরদার কিংবা প্রধান"। [6] আরো এসেছে " হে মানব মন্ডলী নিশ্চয় আমি (আল্লাহর পক্ষ হতে ) প্রেরিত অনুগ্রহ (রাহমাত)[7]। তাইতো নবীজির একটি নাম হচ্ছে " আর- রাহমাতুল মোহদাহ[8] বা (নিবেদীত অনুগ্রহ )।সুতরাং আমাদেরকে ঈদ-ই-মীলাদুন্নাবী(সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উদযাপনের মাধ্যমে আনন্দ প্রকাশ করা উচিৎ।
---------------------------------------
[1] - সূরা আল আম্বিয়া আয়াত নং ১০৭ ।
[2] - সূরা ইব্রাহিম আয়াত নং ১ ।
[3] - ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি (৮৪৯ – ৯১১ )হিঃ তার উল্লেখ যোগ্য তাফসির আদ্ দুররুল মানছুরের মধ্যে প্রখ্যাত সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাসের বরাত দিয়ে উল্লেখ করেছেন । দেখুন আদ্ দুররুল মানছুরে ( ৪ / ৩৬৭ ) , ইমাম ইবনে আতিয়া আল-আন্দুলুসী তার আল্ মোহাররা উল ওয়াজিযে উল্লেখ করেছেন (৩ / ১৪৩), ইমাম আবু হাইয়্যান আল – আন্দুলুসী তার আল বাহারুল মুহিতে (৫ / ১৩৭ ) , ইমাম সাহল তাশতুরী তার তাফসীরে তাসতুরীতে ( ১ / ২১৭ ) , ইমাম ইবনুল জাওযী (৫০৮ – ৫৯৭ )হিঃ তার যাদুল মাছি্রে (৪ / ৪০ )প্রমূখ ।
[4] -প্রায় সমস্ত তাফসীর কারকগণই উল্লেখ করেছেন। যেমন ইমাম সুয়ুতী তার আদ দুররুল মানছুর (৪ / ৩৬৭ ), ইবনে আজিবা তার আল বাহারুল মাদীদে (৩ / ২৩১ ) , ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী ( ৫৪৪ – ৬০৬ )হিঃ তার কবীরে ( ১৭ / ২৭২ ) , ইমাম ইবনে আতিয়া আল-আন্দুলুসী তার আল্ মোহাররা উল ওয়াজিযে উল্লেখ করেছেন (৩ / ১৪৩), ইমাম আবু হাইয়্যান আল – আন্দুলুসী তার আল বাহারুল মুহীতে (৫ / ১৩৭ ), ইমাম ইবনুল জাওযী (৫০৮ – ৫৯৭ )হিঃ তার যাদুল মাছি্রে (৪ / ৪০ ) .
[5] - সূরা আল-ই-ইমরান আয়াত নং ১৬৪ ।
[6] উল্লেখিত চয়নটি হাদীছের অংশ বিশেষ হাদীস খানি ইমাম মুসলিম তাঁর সাহীহ মুসলিমে( ৭ / ৫৯ ) , ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে ( ১৬ / ৫৭০ ) , ইমাম তাবব্রানী তার মু,জামুল আওসাতে ( ২ / ১২৭ ) , ও তার মু,জামুল কবীরে ( ৩ / ৮৮ ), ইমাম আবূ দাউদ তার সূনানে ( ৪ / ৩৫১ ) , ইমাম তিরমিজি তার সুনানে ( ৫ / ৩০৮৯ ) , হাফেজ বায়হাকী তার সু,য়াবুল ঈমানে ( ২ / ১৭৮ ) , হাফেজ ইবনে হিব্বান তার সাহীহে ( ১৪ / ৩৯৮ ), ইবনে আবী শায়বা তাঁর মুসান্নাফে ( ৭ / ৪৩০ ) , হাফেজ হাকিম তার মুসতাদরাকে ( ২ / ৬৬০ ), ইসপাহানী তাঁর হিলিয়ার ( ১ / ৬৩ ) মধ্যে উল্লেখ করেছেন ।
[7] ইমাম হাকিম তাঁর মুসতাদরাকে কিতাবুল ইমান অধ্যায়ে ( ১ / ৩৫ ) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন এবং ইমাম জাহাবী ইন্তিঃ ৭৭৪ হিঃ তাঁর তালখীসের মধ্যে বিশুদ্ধ বলেছেন। এ ছাড়া ইমাম তাবরানী তাঁর আল মু,জামুস সাগীরে ( ১ / ১৯৫ ) , হাফেজ নুর উদ্দীন হাইছামী তার মাজমা উজ আল জাওয়ায়েদে ( ৮ / ২৫৭ ) , ইমাম বায়হাকী তার দালায়েল উল আন্ নাবুয়াতে ( ৬ / ২৯৯ ) , ইবনে সাদ তার তাবাকাতের ( ১ / ১২৮ ) , ইমাম আব্দুল বাকী তার জুরকানী আলাল মাওয়াহেবে ( ৩ / ১৩১ ) উল্লেখ করেন ।
[8] ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতী ( ৮৪৯ – ৯১১ )হিঃ তাঁর আর রাওদুল আনিকা ও তাঁর প্রণিত আন্ নাহাজা তুস সাবীয়া ফি আসমা ইন নাবাবীয়া পৃষ্ঠা নং ১৪৮ উল্লেখ করেন ।